Welcome to Evercare Hospital Dhaka.
ক্যান্সার রোগীরা রোজা রাখলে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন

রমজান মুসলমানদের জন্য সংযমের মাস, যা আত্মিক ও শারীরিক উভয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তবে ক্যান্সার রোগীদের জন্য দীর্ঘ সময় উপবাস থাকা একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, বিশেষত যারা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা অন্যান্য চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ইসলামে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য রোজা রাখার বাধ্যবাধকতা নেই, তবে অনেক রোগী আত্মিক প্রশান্তির জন্য রোজা রাখতে চান। সঠিক পরিকল্পনা ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করলে ক্যান্সার রোগীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা বজায় রেখে রোজা পালন করতে পারেন।
১. চিকিৎসকের পরামর্শ: যারা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপি গ্রহণ করছেন, তাদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি রোজা রাখার ফলে ডিহাইড্রেশন, দুর্বলতা বা পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি থেকে থাকে, তবে রোজা না রাখাই ভালো।
২. ওষুধ গ্রহণের সময়সূচি সামঞ্জস্য করা: দিনের বেলায় খাদ্য গ্রহণের সুযোগ না থাকায় ওষুধের সময়সূচি পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। ব্যথানাশক, বমি প্রতিরোধী ও হরমোনাল ওষুধের কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেগুলো গ্রহণ করতে হবে।
৩. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি প্রতিরোধ: রোজা রাখলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলতে হবে। হালকা ব্যায়াম যেমন- হাঁটাহাঁটি, শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে।
৪. পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
সেহরির পরামর্শ
পর্যাপ্ত পানি পান করুন (কমপক্ষে ২-৩ গ্লাস) যাতে সারাদিন ডিহাইড্রেশন এড়ানো যায়।
ধীরে হজম হয় এমন খাবার, যেমন লাল চালের ভাত, আটার রুটি, ডিম, দুধ, বাদাম ও ফল খাওয়া উচিত।
অতিরিক্ত ঝাল, লবণ ও ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো ডিহাইড্রেশন বাড়াতে পারে।
ইফতারের পরামর্শ
খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করুন।
হালকা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, যেমন মাছ বা মুরগির মাংস, ডাল, শাকসবজি, দই, বাদাম ও ফল।
অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার (পিয়াজু, বেগুনি, জিলাপি), বেশি মিষ্টিজাতীয় খাবার ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন।
সেহরি ও ইফতারের মধ্যে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
সুপ, দই ও ফলের রস গ্রহণ করলে শরীর আর্দ্র থাকবে।
বিশেষ বিশেষ ক্যান্সার রোগীদের জন্য সতর্কতা
কেমোথেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা রোজা রাখার ফলে ডিহাইড্রেশন ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেড়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া রোজা রাখা উচিত নয়।
রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগীরা
বিশেষত পেট বা তলপেটে রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী রোগীদের জন্য হজমজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা রোজা রাখার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
সার্জারি বা অস্ত্রোপচারের পরবর্তী রোগীরা
অস্ত্রোপচারের পর পর্যাপ্ত পুষ্টি ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এই সময় রোজা রাখা ক্ষতিকর হতে পারে।
নিম্নলিখিত কোনো লক্ষণ দেখা দিলে রোগীদের অবিলম্বে রোজা ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়-
অতিরিক্ত দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা
ক্রমাগত বমি বা ডায়রিয়া
তীব্র ডিহাইড্রেশন (মুখ শুকিয়ে যাওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া)
জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ
উপসংহার
রমজান মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তির মাস, যা ক্যান্সার রোগীদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে যদি রোজা রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে ইসলাম ধর্মে অন্যান্য ইবাদত—যেমন দান-সদকা, কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ ও দোয়ার মাধ্যমে রমজান পালন করার সুযোগ রয়েছে।
রোজার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ ইসলাম শরীরের সুস্থতাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। যদি রোজা রাখার ফলে চিকিৎসা প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বা শরীরের ক্ষতি হয়, তবে তা পরিহার করাই উত্তম।
লেখকঃ
সিনিয়র কনসালটেন্ট